জমিল আহমেদ ক্বাসিমী,
মর্কজুল মারিফ এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার, মুম্বাই
মুহররম বা মুহাররমুল হারাম ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি বছরের চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে একটি যেখানে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল। রমজান মাসের পর এটিকে দ্বিতীয় পবিত্রতম মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। মহররমের দশম দিন আশুরা নামে পরিচিত।
ইসলামী হিজরী সন চন্দ্র অনুযায়ী গননা করা হয়। এটি হজরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সর্বপ্রথম শুরু করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় যখন হিজরত করেন তখন থেকেই এটির গননা শুরু হয়েছে। তাই হিজরী ক্যালেন্ডারের গননা ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকেই শুরু করা হয়েছে। হিজরী ক্যালেন্ডারে ও 12 টি মাস আছে। মহররম হিজরী ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। নতুন চাঁদ দেখার পর ইসলামী মাসের এবং নববর্ষের সূচনা করা হয়।
ইসলামে দিন এবং মাসের গুরুত্ব রয়েছে। আমরা অনেকেই মুহাররম মাসের নাম শুনেছি কিন্তু মাসটির ফযীলত সম্পর্কে কিছুই হয়তো জানা নাই। এই মাসটি মুসলিমদের নিকট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসটিতে কিছু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল এবং এই মাসটির অনেক ফজিলতও আছে ।
মুহাররম একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ সম্মানিত। এই মাসটিকে শাহরুল্লাহ বলেও ডাকা হয়, যার অর্থ আল্লাহর মাস। এই মাসটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে যেটিকে আশুরার দিন বলা হয়। এটি মাসের ১০ তারিখ আর দিনটির অনেক ফজিলত রয়েছে ।
ইবনে ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাঃ) মাদীনা এলেন, তখন ইয়াহূদীগণ আশুরার দিন রোজা পালন করত। তারা জানাল, এ দিন মূসা (আ.) ফিরাউন এর উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের কে বললেন, মূসা (আ.) এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হকদার, তাই তোমরা ও রোজা পালন কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৬৮০)
এই হাদীসটি থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা এই দিনেই মূসা (আলাইহিস সালাম) কে জয়ী করিয়ে ছিলেন এবং ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে ছিলেন। এছাড়া এই দিনটিতে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তিনার পরিবারসহ শহীদ হয়েছিলেন। যার ফলে এই দিনটি সকলের নিকটে এত স্মরণীয় হয়ে আছে।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মজীদে বলেন: ‘নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে, বারো মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না।’ (আত তাওবাহ,৩৬)
হযরত আবু বক্কর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এক বছর হয় বারো মাসে। এরমধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিন মাস ক্রমানবয়ে আসে- জিলকাদ যুলহাজ্জা ও মহরম এবং রজব জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মাঝে হয়ে থাকে।” (বুখারী, ৪৪০৬)
উপরের আয়াত ও হাদিসটি থেকে বোঝা যায় যে, চারটি সন্মানিত মাসের মধ্যে মুহাররম হল একটি সম্মানিত মাস। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম) এই মাসটির রোজার সম্পর্কে বলেন: “রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররাম (মাসের রোজা)।” (মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬৩)
অন্য একটি হাদিসে বলেন: “রমাজান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহররম এর রোজা হচ্ছে সর্বোত্তম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৪২৯)
এই হাদিস দুইটি থেকে প্রমানিত যে মুহররম মাস কে আল্লাহর মাস বলা হয় এবং এই মাসের রোজা রমজান মাসের পর সর্বোত্তম। এই মাসের রোজার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আল্লহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের পাপ মাফ করে দিবেন।” (সহীহ মুসলিম)
আমরা অনেকেই মুহরম মাসে একটি রোজা রাখি। রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো এক দিন রোজা রাখো।” (মুসনাদে আহমাদ) তাই আমাদের দুইটি রোজা রাখা উচিত। আশুরার দিনে আমরা যেন সকলেই রোজা রাখতে পারি।