মিহির দেবনাথ,
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক, করিমগঞ্জ, আসাম।
করিমগঞ্জ ,১১ মে।। একদম পাক্কা খবর। কোনো ভুল হওয়ার কথা নয়। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর পরই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার নির্দেশ এ রকমই। ইস্তফা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবেন বিজেপিতে। এবার আর হাত নয়, পদ্মফুল নিয়েই যাবেন জনতার দুয়ারে। জনতা জনার্দন গণতন্ত্রে সবকিছু। যদিও উপ – নির্বাচনে থাকে শাসক দলের সুবিধা।যদিও কমলবনে তাঁর পদচারণা শুরু হয়েছে সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে।
যদ্দুর খবর , নভেম্বরেই হচ্ছে উত্তর করিমগঞ্জে উপ – নির্বাচন। একই সাথে ধলাইয়েও হবে ভোট। পরিমল শুক্লবৈদ্য শিলচর থেকে সংসদে পা রাখা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। বিজেপিতে এখন সর্বময় কর্তা হিমন্তবিশ্ব শর্মা। গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট মন্ত্রী পরিমলবাবু। লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর তাঁর কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু হিমন্তর ইচ্ছাকে নাকচ করতে পারেননি। নাকচ করলে মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। সম্ভাবনা ছিল , আগামীতে বিধানসভায় টিকিট না – পাওয়ার। কষ্ট করে অনেকেই তো তেতো গিলেন , গিলতে বাধ্য হন !
সিদ্দিক আহমদ রাজ্যসভা ভোটে ক্রসভোটিং করে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। প্রকাশ্যে এতদিন মুখ্যমন্ত্রীর বন্দনা গাইলেও বিজেপির নাওয়ে উঠেননি লোকের সামনে। লোকসভা নির্বাচনে কোনো রাখঢাক ছিল না। মুসলিমদের উন্নতির ‘ বার্তাবাহক ‘ হিসাবে বিজেপিকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর বিধায়ক পদ বহাল। লোকসভা ভোটের আগে বিধান সভার অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার দু ‘ দিন আগে হঠাৎ করে কমলাক্ষ সদনে ‘উন্নয়নের ‘ প্রশ্নে সরকারকে সমর্থন করে বক্তৃতা দেন। পরদিন তো কংগ্রেসকে চাঁচাছোলা ভাষায় সমালোচনা করেন তিনি। লোকসভা ভোটে তো জান বাজি রেখে ছিলেন গেরুয়া তরিতে। কংগ্রেস টিকিট উত্তর করিমগঞ্জ থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি। তাঁর ভোটারদের মধ্যে আশি শতাংশ ছিলেন মুসলিম মানুষ।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত কিন্তু তাঁর প্রিয় কমলাক্ষকে ঝুলিয়ে রাখতে চান না। আর কমলাক্ষও চাইছেন শ্যামাপ্রসাদ ভবনে তাঁর স্থায়ী উপস্থিতি। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বক্তব্য বিজেপির বক্তব্য বলে স্বীকৃত নয়। স্বীকৃতি চাইছেন তিনি। বরাক বিজেপির এখন যে অবস্থা , মুখ্যমন্ত্রীর কথাকে উপেক্ষা করে চলার সাহস কারো নেই। তাই নিচ থেকে ওপর —- নেতা , পাতিনেতা সকলেই উপ – নির্বাচনে কমলাক্ষের পক্ষে নহবত – এর শরিক যে হবেন , তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মুসলিম ভোট কী পরিমাণ তাঁর সঙ্গে রয়েছে , এই চিত্রটিও পরিষ্কার হবে লোকসভার ভোট গণনার পর।
২৬- এ কমলাক্ষ ছুটবেন কাটিগড়ায়। এমন কথা হয়েছে হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে। নতুন করে নির্ধারিত করিমগঞ্জ আসনে রিস্ক রয়েছে। ডিলিমিটেশনের পর চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। উপ -নির্বাচন হবে পুরানো বিধানসভা কেন্দ্র মোতাবেক। তাই জিতে আসতে বিশেষ কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, বিজেপির বহু নেতা বলছেন এমন কথা। ঐক্যবদ্ধ লড়াই আশা করছেন কমলাক্ষও। কমলাক্ষের বিধায়ক পদ খারিজের জন্যে কংগ্রেস আদালতে যাওয়ার ঘোষণা করেছে। সিদ্দিক ইস্তফা দেবেন কিনা , পরিষ্কার নয়। তবে হিমন্তর বাজি যে কমলাক্ষ , এই চিত্রটি দেখা গেছে সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে।