ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বিরুদ্ধে জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের জয়েন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সভা এবং বিরোধী সংসদ সদস্যদের বিশেষ সভা ডাকার সিদ্ধান্ত
জমিয়তের পক্ষ থেকে আইন কমিশনে জবাব দাখিল করা হয়েছে।
জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের সমস্ত ইউনিট বার কোডের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে তাদের মতামত দাখিল করতে সক্রিয় হওয়া শিদান্ত।
জমিয়ত উলামা ই হিন্দ মুসলিম পার্সোনাল লকে টার্গেট করার কোনো চেষ্টা মেনে নেব না: মাওলানা সৈয়দ মাহমুদ আসাদ মাদানী সাহেব সভাপতি জমিয়ত উলামা ই হিন্দ।
ইস্টার্ন ক্রিসেন্ট
নয়াদিল্লি, ১৩ই জুলাই, ২০২৩। জমিয়ত উলামা ই হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটির সভা জমিয়ত উলামা ই হিন্দের সভাপতি মাওলানা সৈয়দ মাহমুদ আসাদ মাদানী সাহেবের সভাপতিত্বে জমিয়ত উলামা ই হিন্দের সদর দপ্তর মাদানী হল দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষভাবে অভিন্ন সিভিল কোড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় এবং মুসলিম পারিবারিক আইনের সামনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে জমিয়ত উলামা ই হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাকিমুদ্দিন ক্বাসিমী সাহেব পূর্বের কার্যধারা উপস্থাপন করেন এবং অ্যাডভোকেট মাওলানা নিয়াজ আহমদ ফারুকী জমিয়ত উলামা ই হিন্দের পক্ষে আইন কমিশনে দেওয়া উত্তরের একটি বিশদ খসড়া উপস্থাপন করেন। যা নিয়ে বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।মুসলিম পার্সোনাল ল অ্যাক্ট দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে মুসলিম পার্সোনাল ল অ্যাক্ট নারীর অধিকারের রক্ষক এটি বাতিল হলে নারীদেরকে দেওয়া অনেক অধিকারের অবসান ঘটবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে জমিয়ত উলামা ই হিন্দের সভাপতি মাওলানা সৈয়দ মাহমুদ আসাদ মাদানী বলেন যে জমিয়ত উলামা ই হিন্দ মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত এপ্লিকেশন এক্ট 1937) বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এটি এই আইনের প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে। বর্তমান ইউসিসি বিশেষভাবে মুসলিম পার্সোনাল লকে টার্গেট করছে যা আমাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আমরা এই ধরনের যেকোনো প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই। মাওলানা মাদানী বলেন এই বিষয়টি মুসলিম সংখ্যালঘুদের পরিচয়ের সঙ্গে জড়িত দেশের সংবিধানে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রাখা হয়েছে তাই যদি কারও পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় তাহলে তা হবে একটি বিপর্যয়। দেশের গর্বিত পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা এটি। মাওলানা মাদানী বলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় এর প্রণেতা প্রতিষ্ঠাতা ও মতাদর্শীরা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মুসলিম পার্সোনাল ল যা কোনো প্রথা ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে নয় পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে তৈরি। এবং এটিকে সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে কিন্তু আজ আমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি তা খুবই হতাশাজনক। এসব পরিস্থিতির সমাধান না হলে মুসলমানরা হতাশার শিকার হবে এবং এটা দেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।
তাই জমিয়ত উলামা ই হিন্দের কার্যনির্বাহী কমিটি অনেক চিন্তা ভাবনার পর বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের দ্বারা প্রস্তুত করা উত্তরটিকে কিছু পরিবর্তন সহ অনুমোদন করেছে যা ভারতের আইন কমিশনের অফিসে দাখিল করা হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটি এই উপলক্ষ্যে অভিন্ন সিভিল কোডের বিষয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বসম্মত অবস্থান জানানোর জন্য দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান দেরকে একটি চিঠি লেখার এবং ভারতের রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দলের মুসলিম ও অমুসলিম সংসদ সদস্যদের সাথে একটি আলোচনা সভা করার এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সংসদে তাদের আওয়াজ তুলতে রাজি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওয়ার্কিং কমিটি এটিও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বর্তমানে রাস্তায় বিক্ষোভ করবে না কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যিক স্তরে যৌথ প্রতিনিধি সভা আয়োজন করা হবে যাতে বিভিন্ন শ্রেণীর লোক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করবে। ওয়ার্কিং কমিটি আরও ঘোষণা করেছে যে আগামী ১৪ জুলাই শুক্রবার ইউসিসির প্রেক্ষাপটে ‘ইয়ুমুল দুয়া (প্রার্থনা দিবস)’ হিসেবে পালিত হবে।
কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে, জমিয়ত উলামা-অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার ওয়ার্কিং কমিটি দ্বারা এই দুই রাজ্যের ইউনিটগুলিকে পৃথক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যা কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। সভায় বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিশেষ করে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতি হযরত মাওলানা সৈয়দ রাবে হাসানী নদভীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং তাঁর আত্মার চির শান্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়। তারা ছাড়াও মাওলানা গোলাম রসূল শাইখুল-হাদিস মাদ্রাসা ইমদাদিয়া মুম্বাই মাওলানা ইয়াহিয়া নদভী বেগুসরাই মাওলানা আলমগীর চৌধুরী হাজী নোমান সহ-সভাপতি জমিয়ত উলামা বেনারস হাজী আবদুল বাসিত ও হাজী আবদুল কবির বেনারস মাওলানা হাফিজ নাদিম সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই মাওলানা আশরাফুল ইসলাম। ইমাম কাসিম চেয়ারম্যান আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের মা আদির মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে। রিববার সন্ধ্যায় মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ সালমান মনসুরপুরী নাইবে আমিরুল হিন্দের দোয়ার মাধ্যমে সভা শেষ হয়।
জমিয়ত উলামা ই হিন্দের সভাপতি মাওলানা সৈয়দ মাহমুদ আসাদ মাদানী ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাকিমুদ্দিন ক্বাসিমী ছাড়াও, মাওলানা মোহাম্মদ সালমান বিজনোরী সহ-সভাপতি জমিয়ত উলামা ই হিন্দ, মাওলানা মুফতি আহমদ দেবলা সহ-সভাপতি জমিয়ত উলামা ই হিন্দ, মাওলানা ক্বারী শওকত আলী কোষাধ্যক্ষ জমিয়ত উলামা ই হিন্দ ছাড়া এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নাইবে আমীরুল-হিন্দ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ সালমান মনসুরপুরী, মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল ক্বাসিমী সভাপতি জমিয়ত উলামা আসাম, মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কলকাতা, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রাশিদ আজমি নাইবে মহতমিম দারুল উলূম দেওবন্দ, মাওলানা মুফতি আবদুল্লাহ মারুফী দারুল উলূম দেওবন্দ, হাজী মোঃ হারুন মধ্যপ্রদেশ মাওলানা মোহাম্মদ আকিল গাড়ী দৌলত, মাওলানা মুফতি আপপান মনসুর পুরী, মাওলানা মুফতি জাবেদ ইকবাল কিশানগঞ্জ বিহার, মাওলানা নিয়াজ আহমদ ফারুকী, ডাঃ মসয়োদ আজমী, মাওলানা সিরাজ উদ্দীন ময়িনী দরগাহ আজমীর শরীফ, মুফতি ইফতিখার ক্বাসিমী কর্নাটক, মুফতি শামসুদ্দীন বাজলী কর্নাটক, মাওলানা নাজিম ক্বাসিমী পাটনা, হাজি মোহাম্মদ হাসন চেন্নাই, মাওলানা ইব্রাহিম কেরেলা, মাওলানা রফিক মাজাহিরী, মাওলানা আব্দুল কোদ্দুস পালনপুরী, প্রেসার নিসার আহমদ আনসারী আহমেদাবাদ, হাফিজ উবাইদুল্লাহ বানারস, মাওলানা ইয়াহইয়া করিমী মেওয়াত, মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া বাঁশকান্দি আসাম, মাওলানা আব্দুল কাদির আসাম, মাওলানা হাবিবুর রহমান এলাহাবাদ, ক্বারি আয়ুব আজমী ও আইনজীবী সৈয়দ সোয়ুদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।