“মহা বিকাশ আগাড়ি” না “মহায়ুতি” কে হাসবে সর্ব শেষ হাসি?

Eastern
4 Min Read

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন: একটি বিশ্লেষণ

লিখক: তৌকির রাহমানী

বাংলা অনুবাদ: জামিল আহমেদ কাসমী

মহারাষ্ট্রে চলমান বিধানসভা নির্বাচনের কার্যক্রম একদম শীর্ষে, এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি পূর্ণ উদ্যমে সক্রিয় রয়েছে। যদিও মহারাষ্ট্র বিধানসভার মোট আসন সংখ্যা মাত্র ২৮৮, তবে মনোনয়নের শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরে, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯২২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অসংখ্য নির্দল প্রার্থী নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করতে রাজনৈতিক ময়দানে পা রেখেছেন। এবারের নির্বাচনে দুটি বড় জোটের মধ্যে সরাসরি লড়াই দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে, কে জিতবে তা বলা আগাম হবে। দুটি বড় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল, শিবসেনা ও এনসিপি, নিজেদের শক্তির পরিচয় দেওয়ার জন্য সক্রিয় রয়েছে, তবে দুর্ভাগ্যবশত, গত নির্বাচনের পরে এই দলগুলি ভাঙনের শিকার হয়ে চারটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এই বিভাজনের ফলে অন্যান্য দলগুলির সুবিধা হয়েছে এবং তারা সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। এবার, একদিকে শারদ পাওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে এনসিপি ও শিবসেনা কংগ্রেসের সাথে সক্রিয়, অন্যদিকে অজিত পাওয়ার ও একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে এনসিপি ও শিবসেনা বিজেপির সাথে মিলিত হয়ে ময়দানে রয়েছে। এই সহযোগী দলগুলির মধ্যে এক দল তাদের জোটের নাম “মহা বিকাশ আগাড়ি” রেখেছে, অন্য দলটি নাম রেখেছে “মহায়ুতি”। আপাতদৃষ্টিতে এই জোটগুলি শক্তিশালী, কিন্তু অভ্যন্তরীণ এই জোটগুলির মধ্যে মতবিরোধ ও আদর্শিক অস্থিরতাও রয়েছে।

আসন বিভাজনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, এবং এর একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা এখানে আগ্রহের বিষয় হতে পারে। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন ২০২৪-এ মোট মনোনয়ন সংখ্যা ছিল ১০,৯০০, যার মধ্যে ৯২২৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে। অগ্রহণযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ১৬৩৯, এবং নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৫। মনোনয়নের শেষ তারিখের পর যে পরিস্থিতি সামনে এসেছে তা থেকে জানা যায় যে কংগ্রেস পার্টি মোট ১০২টি আসনে তাদের প্রার্থী মনোনীত করেছে, আর তাদের মিত্র এনসিপি (শারদ পাওয়ার গ্রুপ) ৮৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেসের আরেক মিত্র শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গ্রুপ) ৯৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অন্যান্য মিত্রদের মধ্যে ইন্ডিয়া পিজেন্টস এন্ড ওয়ার্কার্স পার্টি ৬টি আসনে, মার্ক্সবাদী পার্টি ৫টি, সমাজবাদী পার্টি ২টি এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মাত্র ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

অন্যদিকে, বিজেপি ১৪৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, তাদের মিত্র এনসিপি (অজিত পাওয়ার গ্রুপ) ৫২টি এবং শিবসেনা (শিন্ডে গ্রুপ) ৮০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তাদের অন্যান্য মিত্রদের মধ্যে জন সুরাজ্য শক্তি ২টি আসনে এবং অথাওলে, রাষ্ট্রীয় যুব স্বাভিমান পার্টি ও রাজর্ষি শাহু বিকাশ আগাড়ি একটি করে আসনে লড়াই করছে। (আসন ভাগাভাগির এই সংখ্যা উইকিপিডিয়া অনুসারে)।

সাথে, বিভিন্ন ছোট দলও পূর্ণ উদ্যমে এই নির্বাচনী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়াও, রাজনৈতিক এলাকায় প্রভাবশালী নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা ও বেশ ভালো, যারা বড় দলগুলির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

এনসিপি ও শিবসেনার মধ্যে বিভাজন উভয় দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি সম্পর্কে এখনই কিছু বলা কঠিন হবে। তবে, মহা বিকাশ আগাড়ির পাল্লা ভারী মনে হচ্ছে এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে জয় তারাই পাবে। তবে মহায়ুতি ও দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যদিও মহায়ুতিতে বিজেপির সাথে দুই মিত্র গ্রুপের নেতা ক্ষণস্থায়ী লাভের জন্য বিজেপির সাথে রয়েছেন, তবে আদর্শগত মতপার্থক্যের কারণে বলা মুশকিল যে এই জোট কতদিন টিকে থাকবে। যে কোন সময় রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। জনগণের জন্য এটি কঠিন হয়ে পড়েছে যে তারা এনসিপি ও শিবসেনার বিভক্ত শাখাগুলির মধ্যে কাকে বিশ্বাস করবে এবং কোন দল জনগণের স্বার্থে ভালো প্রমাণিত হবে। মনে হচ্ছে এবারের নির্বাচন অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং কঠোর প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। মনে রাখতে হবে যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৪ নভেম্বর, ভোটগ্রহণ হবে ২০ নভেম্বর এবং ফলাফল ঘোষণা হবে ২৩ নভেম্বর।

এদিকে, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ তার লেখা “ডায়েরি অফ এ হোম মিনিস্টার” প্রকাশ করে মহায়ুতি, বিশেষত বিজেপি ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। বইটিতে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

Share This Article
Leave a Comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।