মারকাজুল মা’আরিফ, মুম্বাই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত শূন্যতা পূরণ করেছে:
হাফিজ নাদিম সিদ্দিকী, সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে মহারাষ্ট্রের বক্তব্য
ইসি নিউজ ডেস্ক
মুম্বাই, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: মারকাজুল মা’আরিফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, মুম্বাই-এর বার্ষিক সম্মেলন গতকাল বৃহস্পতিবার অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বিদ্যাপীঠের উদ্দেশ্য হল, আলেমদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তোলা, যাতে তারা জাতির জন্য আরও কার্যকর হতে পারেন। পাশাপাশি, এখানে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিক প্রশিক্ষণেরও সুব্যবস্থা করা হয়। এই লক্ষ্যে এখানে একটি সমন্বিত মক্তবও পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে স্থানীয় শিশুদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়।
ছয় বছরের সিলেবাসের আওতায় এই মক্তবে বর্ণমালা শেখানো থেকে শুরু করে কুরআন, সীরাতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মৌলিক ইসলামিক বিষয়ের পাঠদান করা হয়, যাতে স্কুলে পড়াশোনা করা শিশুরা ইসলামের মৌলিক দিকগুলো বুঝতে পারে এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে। এই উপলক্ষে, মক্তবের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রাণবন্ত বক্তৃতা প্রদান করে, সংলাপ ও চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নত ও আদর্শ তুলে ধরে এবং উপস্থিত দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করে।
মারকাজুল মা’আরিফের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। মুআজ কাসেমি “ডেইলি রুটিন” (প্রতিদিনের কাজ) বিষয়ে একটি চমৎকার প্রেজেন্টেশন দিয়েছে, আর ক্লাস মনিটর শহজাদ নদভী পুরো ক্লাসের পক্ষ থেকে তাদের শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে শিক্ষকদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। “সেরা বক্তা” খেতাব অর্জন করেছে কামারুল হুসাইন কাসেমি, যিনি ইংরেজি ভাষায় “আধুনিক যুগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শিক্ষার গুরুত্ব” শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।

বছরের সার্বিক শিক্ষাগত পারফরম্যান্স অনুযায়ী, মুহাম্মাদ আরশাদ আনসারি প্রথম স্থান অর্জন করেছে, তোসিকুর রহমান লস্কর দ্বিতীয় এবং মুহাম্মাদ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। পাশাপাশি, ধারাবাহিক উপস্থিতি ও অধ্যবসায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয়েছে, যেখানে শতভাগ উপস্থিতির জন্য মুহাম্মাদ আসাদ ও মুহাম্মাদ নাদিমকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
শিক্ষার পাশাপাশি মারকাজুল মা’আরিফে ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে বছরের শেষে পুরস্কার বিতরণ একটি ইতিবাচক রীতি, যার উদ্দেশ্য তাদের আরও আগ্রহ ও দৃঢ়তার সঙ্গে শিক্ষার পথে এগিয়ে নেওয়া। “ডিপ্লোমা ইন ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার” কোর্সের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মক্তবের শিশুদেরও সেরা শিক্ষাগত ও চারিত্রিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে অতিথিদের মাধ্যমে মূল্যবান পুরস্কার ও ট্রফি প্রদান করা হয়।
বক্তারা বলেন, “এই সম্মেলন এর প্রতিটি শিক্ষাগত ও প্রশিক্ষণমূলক দিকের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, মারকাজুল মা’আরিফ শুধু ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং এটি ব্যক্তিত্ব গঠনে এবং শিক্ষাগত উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” বিভিন্ন বিদ্যাশিক্ষা ও সমাজসেবামূলক ব্যক্তিত্বরা এই মহতী সম্মেলনে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং মারকাজুল মা’আরিফের প্রচেষ্টাকে বিশেষ করে এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল আল-কাসেমি ও তার পরিবারের নিঃস্বার্থ সেবাকে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সম্মেলনের সভাপতি হাফিজ নাদিম সিদ্দিকী (সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে মহারাষ্ট্র) তার মূল বক্তব্যে মারকাজুল মা’আরিফের ভিত্তি, এর প্রয়োজনীয়তা ও অবদানের ওপর আলোকপাত করে বলেন, অতীতে হায়দরাবাদ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় দারুল উলুম দেওবন্দের ফারিগদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা ছিল, যেখানে তাদের দক্ষতার ভিত্তিতে স্কুল-কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ দেওয়া হতো। দুঃখজনকভাবে, সময়ের সঙ্গে সেই ধারাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে এখন মারকাজুল মা’আরিফ সেই শিক্ষাগত শূন্যস্থান পূরণ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আধুনিক বিশ্বের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যার জন্য আমরা এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রধান অতিথি জনাব হারুন রশীদ (এমএলএ, ভারসোভা, মুম্বাই) শিক্ষার্থীদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন আদর্শকে বাস্তব জীবনে অনুসরণ করা আবশ্যক। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ এসেছিলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাঁর শিক্ষাগুলো সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য দিশারী।

বিশিষ্ট অতিথি মাদ্রাসা ইসলামিয়া গুলশান নগর, মুম্বাই-এর নাজিমে তালিমাত, মাওলানা মহিবুল মুরসালিন সাহেব মক্তবের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে মক্তব অপরিহার্য। এখানে শিশুদের ইসলামি শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাই অভিভাবকদের উচিত এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা। মক্তব কেবল ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং এটি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, তিনি বলেন, মক্তব শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, নারী ও পুরুষদের এক বিশাল সমাগম ঘটে। এই সমাপনী সভাটি সুচারুভাবে পরিচালনা করেন মাওলানা শাহিদ খান কাসেমি ও মুফতি জসীমুদ্দিন কাসেমি, আর স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মাওলানা বুরহানুদ্দিন কাসেমি। শেষপর্যায়ে, মাওলানা আতিকুর রহমান কাসেমির কৃতজ্ঞতাসূচক বক্তব্যের পর মুফতি মুহাম্মাদ আসলাম (শাইখুল হাদিস, জামিয়ুল উলূম, বালাপুর, আকোলা)-এর হৃদয়গ্রাহী দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়, যেখানে মুসলিম উম্মাহর উন্নতি, জ্ঞানের প্রচার ও কল্যাণের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।
I’m really impressed along with your writing skills and also with the layout for your
weblog. Is that this a paid topic or did you modify it your self?
Anyway stay up the nice high quality writing, it is rare to look
a great blog like this one these days.